ব্লগ

“লকব” আধ্যাত্মিক প্রদীপ্ত

আধ্যাত্মিক প্রদীপ্ত, জীলানী. জান শরীফ বাবা দেলোয়ার হোসেন আল- সুরেশ্বরী

লকব

(আধ্যাত্মিক প্রদীপ্ত পৃঃ নং ৫৫ থেকে ৫৭)

লকব অর্থ সম্মান সূচক খেতাব, উপনাম, উপাধি, ডাক নাম ইত্যাদি। পরিভাষাগত সংজ্ঞা:- কোন ব্যক্তি নামের সহিত সংযুক্ত বর্ধিত কলে বর থাকলে তা “লকব” হিসাবে বিবেচিত। পূর্বে বা পরে যেমন, মোঃ কামাল বি. এ.। অর্থাৎ এখানে বি. এ. হলো “লকব”। ধর্মীয় দর্শনের উপর মানুষ উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করে বিভিন্ন খেতাব বা “লকব” সম্বলিত নাম প্রচলিত। আধ্যাত্মিক দর্শনের আলোকে এরও গুরুত্ব রয়েছে। মানুষ তার গুরুর দেওয়া সাধনা বা মোরাকাবা-মোশাহেদার মাধ্যমে স্তর অতিক্রম করে বিভিন্ন খেতাবে ভূষিত হয়। আবার জাগতিক ভাবে গুরুগণ তাঁর অনুসারীদের যোগ্য ভেবে বিভিন্ন খেতাবে ভূষিত করেন। এই সবই “লকব” হিসাবে বিবেচিত হয়। উদাহরণ হিসাবে বলবো, আবু হুরায়রা নামের তাৎপর্য হলো আবু অর্থ বাবা এবং হুরায়রা অর্থ বিড়াল, মূল অর্থ দাঁড়ায় বিড়ালের বাবা। উক্ত সাহাবী বিড়ালকে খুবই ভালবাসতেন। এজন্য রাসুলপাক (সাঃ) (আঃ) এ নামে ডেকেছিলেন। (কথিত সূত্র: উল্লেখ করতে পারলাম না)।


জীলানী. জান শরীফ। জীলানী একটি জায়গার নাম, জান অর্থ জীবন, শরীফ অর্থ পবিত্র। মূল অর্থ দাঁড়ায় “জীলানী পবিত্র জীবন” (জাগতিক)। আরও একটু সহজ ভাবে বলতে গেলে পবিত্র কোরানুল মাজিদ মুসলিম অধ্যাসিত পরিবারে প্রায় সবার বাড়িতেই আছে। এই মহা মূল্যবান গ্রন্থটি হেফাজত করতে কাপড় দিয়ে আবরণ বানানো হয়, তার নাম জোজদান। একই কাপড় দিয়ে দরজার পর্দা বানানো হলো। তাহলে উভয় কাপড় একই কিন্তু মূল বিষয় হলো কোরানে আবৃত থাকা কাপড়ের উপরে আমরা চুমু খাই কিন্তু পর্দাতে কেহ চুমু খায় না। আধ্যাত্মিক ভাবে জাগরণ প্রক্রিয়া তরান্বিত হলে অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে। কিন্তু সমস্যা হলো ভাষার মাধুর্যে তাহা উপস্থাপন অনেকটাই কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। কারণ ধর্মীয় বিষয় জাগতিক ইরাদা বিপন্ন হলে জগতের বিড়ম্বনার সম্ভবনা থেকে যায়।


গাউসে খোদা মুশকিল কুশা গাউসুল আজম রইসুল আরেফিন পীরানে পীর দস্তগীর মাহবুবে সোবহানি কুতুবে রব্বানি গাউসে সামদানি শেখ সৈয়দ মওলানা মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের জীলানী আল-হাসানী ওয়াল-হুসায়েনী (আঃ) নামটা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো, মূল নাম ছিল “আব্দুল কাদের”। তিঁনি তাঁর কর্ম এবং সাধনা দ্বারা এখানে উল্লেখিত পদ বা পদ-মর্যদা ছাড়াও অনেক খেতাব বা লকবে ভূষিত। মোরাকাবা-মোশাহেদার মাধ্যমে উল্লেখিত মহামানবের দর্শন, কথোপ-কথন এবং দয়া পরবশ হয়ে কিছু দান করলে উক্ত বিষয় প্রচারের এজাজত বা অনুমতি থাকলে তিঁনি তা “লকব” হিসাবে প্রকাশ করতে পারেন, যদি দয়াল গুরুর নিষেধ না থাকে। আধ্যাত্মিক ধারাবাহিকতা হলো যুক্তির বাহিরে যে যুক্তিপূর্ণ ব্যবস্থা রয়েছে, যাহা যুক্তিতে জানা যায় না। সেটা-ও আধ্যাত্মিক ভাবে জানা যায়। দুনিয়ার জমিনে যত তরিকতের নাম রয়েছে, তাহা কোন না কোন শায়েখ থেকেই শুরু এবং সেখানেই স্থানান্তরিত প্রক্রিয়ায় উহা সম্প্রসারিত হয়। অর্থাৎ মূল থেকে স্থানান্তরিত। অনুরূপ ভাবে “জান শরীফ” একটি “লকব”। তাই “জীলানী. জান শরীফ” লকবটি উল্লেখিত বিষয়ের সাদৃশ্য স্বরূপ।


আমার আপন পীর ও মোর্শেদ কেবলায়ে কাবা তাঁর নাম হলো:- “চেরাগে জান শরীফ ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা ঈমান আল-সুরেশ^রী (আঃ)” (আরও অনেক লকব আছে)। বাবার পবিত্র জবানে শুনেছি, দাদা জান হুজুর কেবলা চেরাগে জান শরীফ “লকবটি” দিয়েছিল। চেরাগ অর্থ প্রদীপ বা আলো বা নূরময়। এটাকে আরও উচ্চ মার্গের ভাষায় প্রকাশ করলে প্রদীপ্ত হয়। জান শরীফ অর্থ পবিত্র জীবন, প্রদীপ্ত পবিত্র জীবন বা নূরময় আলোকিত পবিত্র সত্ত্বা। যে আলো থেকে বহু আলোর সম্প্রসারণ বা স্থানান্তর প্রক্রিয়া। চেরাগে জান শরীফ “লকবটি” একটি প্রকাশিত এজাজত প্রক্রিয়ায় স্থানান্তর, তাই মহান মোর্শেদ এই লকব জীবদ্দশায় যাকে দান করবেন তিঁনি এই লকবের উত্তরসুরী।
উচ্চ পরিষদ সম্পর্কে একটু বলতে চাই:- মহান মোর্শেদের সাথে সুরেশ^র দরবারে গমন করি, দেখলাম জামানার মোজাদ্দেদ শাহ সুফি আহাম্মদ উল্লাহ ওরফে জান শরীফ (আঃ) ওরফে জানু বাবার নাম থেকেই সুরেশ^রী নামের বিস্তার। কিন্তু সুরেশ^র একটি ইউনিয়নের নাম।

 

তাহলে এখানে এই মহান মহামানবের আগমন আলোকিত হওয়ায় উক্ত স্থানের নাম “লকব” হিসাবে পরিচয় ঘটেছে। মহান সুরেশ^রী বাবার রওজার পাশে একটি ঘর বন্ধ অবস্থায় দেখতে পাই। এ বিষয়ে কৌতুহল জাগল এবং বিষয়টি জানবার পরে জানতে পারলাম, উক্ত ঘরে বেশ কয়েকটি আসন সংরক্ষিত। হুজুর পাক (সাঃ) (আঃ) সহ ছয়টি আসন (বিষয়টি সম্পূর্ণ আধ্যাত্মিকতার দৃষ্টান্ত)। বর্তমানে উক্ত ঘরটা নামাজের জন্য উন্মুক্ত দেখতে পাই।


হুজুরপাক (সাঃ) (আঃ) বলেছেন:- “আমি যার মওলা, আলীও (আঃ) তার মওলা”। এই মওলা লকবটি অন্য কোন সাহাবীর সঙ্গে যুক্ত নয়, শুধুমাত্র মওলা (আঃ) এর সঙ্গেই যুক্ত। মওলা আলীর (আঃ) জীবদ্দশায় উক্ত লকবটি কাউকে দান না করিলে ধীরে ধীরে তা আধ্যাত্মিকতার মাধ্যম হিসাবে স্থানান্তরিত হতে চলেছে। উপযুক্ততার বিষয়টি বড় আধ্যাত্মিক দর্শনে। পরিশেষে ওলি, পীর, ফকির, গাউস, কুতব, আবদাল, আরিফ সহ সকল ওলিদের পাক পবিত্র কদম মুবারকে ভক্তি রইল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button