Categories: ব্লগ

হায়াতে ডা: বাবা জাহাঙ্গীর বা ঈমান আল-সুরেশ্বরী (সেই সত্ত্বা পুস্তক হতে সংগৃহিত)

অদ্য ১লা রমজানুল মোবারক ২০২০ ইং তারিখে বাবা পর্দা গ্রহন করেন। অতীব দুঃখের সাথে জানাইতেছি যে, এই খবর জাগতিক বাস্তবে শোনার পর হইতে দেহে প্রাণ আর সক্রিয় ভাবে কাজ করছে না। কিন্তু চলমান দুনিয়াতো আর আমার জন্য থেমে থাকবে না। বার বার পজিটিভ হতে চেষ্টা করি। কোথা হতে যেন অদৃশ্যের ভাবনা ঢেউ এর মত এসে সব হারিয়ে দেয়। এভাবে ক্ষণ অতিবাহিত হওয়ায় শরীরটা একটু দূর্বল ও নিস্তেজ হয়ে আসছে। ধীরে ধীরে হৃদয়ে কালো মেঘের আঁধার নেমে আসতে শুরু করেছে।

বাবার নিকট মুরিদ বা বায়াত পর থেকে বাবার বিদায় পর্যন্ত যে সকল স্মৃতিগুলো আমার হৃদয়ে সঞ্চিত হয়ে আছে, সেগুলো বার বার উকি দিয়ে যায়। তাঁর বাণী, আচার-আচরণ, ভাল লাগা, মন্দ লাগা এসব কিছুুর আলোকে মনে হয় এক ব্যতিক্রমধর্মী মানব রুপেই নিজেকে মেলে ধরে ছিলেন।

এমন মানব আর হয় না হতে পারে না। আমার খুব একটা বেশি সময় তাঁর নিকটে অবস্থান করার সুযোগ হয় নাই। যতটুকু হয়েছে, তাতে আমার নির্ণয়কৃত জ্ঞান দ্বারা এমন ধৈর্য ধারণ করা মানব খুব কমেই আছেন। তাঁর সবচেয়ে যে ভাল গুণটা দেখতাম সেটা হলো, তিঁনি নিজের দুঃখ বা ব্যথাটা কারো সাথে বিনিময় করতেন না। আনন্দময় ‍বিষয়গুলো বা আনন্দের মুহূর্তগুলো শিশুর মত আলাপচারিতা করতেন।

প্রথম যখন বাবার দরবারে যাই তখন মনে পড়ল (ইমাম জাফর সাদিকের পীর) ইমাম আবু হানিফার কথা:- “ওলির দরবারে যাও, ওলির দরবারে গেলে তকদীর পরিবর্তন হয় কারণ ওলিরা খোদার জাত” সভ্যতার আলোকে ধর্ম সম্পর্কেই আমার ধারণা। আধ্যাত্মিকতার মূল বিধান সম্পর্কে আমার কোন ধারণাই নাই। এমন অবস্থা নিয়ে তাঁর দরবারে বা নিকটে উপস্থিত হলাম। বাবা বললেন, সাধনার ইচ্ছা থাকলে মুরিদ হও আর ইচ্ছা না থাকলে অনেক দূর থেকে এসেছো খাওয়া-দাওয়া করে বিদায় হও। এমন কথাতে যেন মহা সমুদ্রে নিপতিত হলে লাগলাম। একে তো ধর্মের লেবাস নেই তার উপর আবার এমন নির্দেশনামা। তবে মোরাকাবা মোশাহেদা করলে এখানে সত্য আছে কি না তুমি সেটা জানতে পারবে, সত্য না পেলে চলে যেও। তাই সেদিন তাঁর কথাতে নিরীক্ষা করতে মুরিদ হই। এখান থেকেই সুফিবাদে পথচলা উঁনি চালিয়ে নিচ্ছেন।

হতাশাটা যেন কোন ভাবেই দূর করতে পারছি না, এ কারণে কলম ধরেছি। বিনা অনুমিতে বাবার রুমে কখনই প্রবেশ করতাম না। একদা বাবা বললেন, বাবা তোমার জন্য কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই। তোমার যখন খুশি ইচ্ছা তখনই চলে আসবে, এমন কি যদি তোমার মায়ের সঙ্গেও থাকি তবুও তোমার অনুমতি লাগবে না। মাঝে মাঝে মনে এমন সনদ পৃথিবীর কোন আপনজন দিতে পারে! তবুও তাঁকে চিনতে পারিনি। নিয়তির অমোঘ কালো অন্ধকার করে বিষাদময় একটি অবস্থা করে দিল। যদিও নফ্সধারী আত্মাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতেই হবে। বুঝবার মত সময় দেননি।

কারণ রমজানুল মোবারক আগত তিন দিন বাকী এমন রাতে বাবা এলেন, আমি তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হঠাৎ বাবার কথাতে চিৎকার দিয়ে উঠি। ঘুমের অবসান হলো। ঘরে বাইরে উকি দিয়ে দেখি কোথাও কেউ নেই, আমার বুঝতে আর বাকী রইল না। চারিদিকে লকডাউন চলছে… ২১ শে এপ্রিল ২০২০ ইং। সেই রাত থেকেই একটি অজানা কষ্ট বুকের মধ্যে চেপে চলতে লাগলাম। এর পূর্বেই দরবারে যাতায়াত নিরুৎসাহিত করেছেন। এভাবেই সময় ফুরিয়ে গেল বাবার সান্নিধ্যে পৌঁছানো হলো না, তিঁনি পর্দা গ্রহন করে নিলেন।

অস্বস্থির একটি নিঃশ্বাস হৃদয় আসনে স্থায়ী করে নিল। এই স্মৃতিচারণ হয়ত কোন দিন কোন কালেই আর ভূলতে পারবোনা। একটু ইশারা রাখতে পাঠকের জন্য তুলে ধরলাম। বাবার মুখে যে কথাটা বার বার শুনতাম তা হলো:- “বিনয় এবং নম্রতা যার মধ্যে নাই তার জন্য সুফিবাদ হারাম” সুরেশ্বর দরবার শরীফ মোবারকে বাবাকে বিনয়ের সম্রাট খেতাবে ডাকতেন। বাবার সঙ্গে সুরেশ্বর দরবার শরীফে গমন করলাম। একা একা বাবা চলতে পারে না, চারজন মিলে ধরে নিতে হয়। অনেক কষ্ট করে পৌঁছালাম শাহ্ সুফি বাবা আলম নূরী আল-সুরেশ্বরীর মহলে। সেখানে বাবার বিশ্রামের জন্য দুইটা রুম দিয়েছিলেন। সেখানে বাবা, আওলাদগণ সহ প্রায় তিনশত’র মত ভক্তকূল।

শরীরে কুলায় না তবুও যেন হার না মানা সৈনিকের মত বাবা রুমে অবস্থান না নিয়ে, প্রতিটি আওলাদে সুরেশ্বরীর আস্তানায় গমন করলেন তাঁদের প্রতি তাজিম করতে। বাবার তাজিম (আদব, বিনয়, নম্রতা) ভাষায় উল্লেখ করা দায়। বাবা বেদম ওয়ারেছী আমাকে বললেন, ভাই তুমি বাবার রুমের সামনে থেকে বিশ্রামের ব্যবস্থা হলে কেউ যেন বিরক্ত না করে।

শীতের রাত, মাঘ মাসের বড় ওরশ। ঘরের সিঁড়ীতে বসে আছি রাত্রি ২টা বাজে (আনুমানিক)। কখন যে ঘুমিয়ে গেছি নিজেও জানি না। রুম থেকে বাবা বের হয়ে বাথরুম সেরে আবার রুমে ঢুকতেই ডাক দিলেন, দেলোয়ার! আমি জেগে দেখি হায়রে আমার দায়িত্ব পালন। বাবা বললেন, শরীর খারাপ লাগলে বিশ্রাম নাও। এমন করে বলা হয়ত আর কেউ বলবে না। এরকম অজস্র স্মৃতি বার বার স্মরণ করে দেয় যা কখনই ভূলা সম্ভব নয়।

বাবার সহবত যারা পেয়েছেন, তারা বাবার আধ্যাত্মিক মোজেজা পেয়েছেন। বাবা সুফিবাদের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং কারিগর। কিভাবে একজন সাধারণ মানুষকে সুফিতে রুপান্তর করতে হয় এটাই তাঁর কারিশমা। শাসন দিয়ে নয়, প্রেম দিয়ে বাবা এটা করতেন। তাঁর একটি বাণীতে বলেছেন:- “শক্তির পূজারী দুনিয়াতে কিছু পেতে চায়, প্রেমের পূজারী সেচ্ছায় সব কিছু হারাতে চায়” । উনার দৃষ্টান্ত ভাষার শৈলীতে উপস্থাপন করা আমার মত গন্ডমূর্খ অজ্ঞানীর পক্ষে তুলে ধরা বেমানান। তাই উচ্চ শিক্ষিত সুফিবাদের উঁচু সিঁড়ীতে যারা উচ্চে অবস্থান করছেন, আপনারা উপস্থাপন করলে মনে হয় একদিন জাতীর জন্য তা উপস্থাপিত হবে। এখানে আবেগ বসত একটু স্মৃতিচারণ করে রাখলাম মাত্র। মওলা সহায় হউন সকল সুফি ও আশেকদের প্রতি। সকলে কল্যাণ হোক। আমিন।

 

 

jahangir Alam

Recent Posts

আধ্যাত্মিক লিপি

ডাউনলোড করুন

4 hours ago

আধ্যাত্মিক প্রদীপ্ত

আধ্যাত্মিক প্রদীপ্ত ডাউনলোড করুন     -: উৎসর্গ ঃ-মুর্শিদে ত্বরিকত সাইয়্যেদ শাহ সুফি কামাল নূরী…

6 hours ago

নবীর মহব্বতই ঈমানের প্রাণ: রাসুল প্রেমে ধর্মের পূর্ণতা❤

নবীর মহব্বতই ঈমানের প্রাণ: রাসুল প্রেমে ধর্মের পূর্ণতা ইসলামের অন্যতম প্রধান ভিত্তি হলো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর…

4 days ago

আধ্যাত্মিক হৃদয়

আধ্যাত্মিক হৃদয় ডাউনলোড করুন  

3 weeks ago

আধ্যাত্মিক বিধান

আধ্যাত্মিক বিধান ডাউনলোড করুন

3 weeks ago

আধ্যাত্মিকতার গোপন কথা

(আলোচনার বিষয় সমূহ)০১। তাসাউফ০২। আহলে সুফফা বা আসহাবে সুফফা০৩। রুহ বিষয়ে আলোচনা০৪ । মহান আল্লাহ্পাক…

4 months ago