ডাঃ বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল-সুরেশ্বরীর মূল্যবান কিছু বাণী চিরন্তনী (সেই সত্ত্বা পুস্তক হতে সংগৃহিত)
“অগণিত, অসংখ্য গুণগুলোকে একত্র করে নাম দেওয়া হয়েছে আল্লাহ্। আসলে আল্লাহ্ বলতে কিছুই নাই বলা যাবে না। কারণ আল্লাহ্ দর্শনের বহু উর্ধ্বের একটি নাম। এই দর্শনটির নামই হলো ফিলোসোফি ইউনিফরচুনেটি অব নেচার তথা প্রাকৃতিক ঐক্যতানের দর্শন”
“একটি মাত্র চিরন্তন ধর্মের মধ্যে সাধকেরা অবস্থান করেন। ইহাই পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের ধর্ম, ইহাই রিলিজিয়ন অব ডেডিকেশন, ইহাই হলো নমস্তে, হরিঔঁম, ইহাই আরবি ভাষায় ইসলাম”
“কামেল পীরেরা অনেক ধ্যান সাধনা করবার পর আল্লাহ্পাকের বিশেষ রহমত অর্জন করতে পেরেছেন। সেই রহমতটি আর কিছুই নয়, কেবল খান্নাসরুপী শয়তানটিকে তাড়িয়ে দেবার সঙ্গে সঙ্গে রুহ তথা আল্লাহ্ স্বয়ং রবরুপে আত্মপ্রকাশ করেন। তখন নফ্সটি হয়ে যায় রুহ এর বাহন মাত্র”
“সত্য সাগরে অবগাহন করার বাসনাটি যাদের প্রবল তাদেরকেই কেবল বলছি গুরু না ধরে ভূলেও সাধনা করতে যাবেন না। কারণ তখন কপালে জুটবে কাঁচকলা। আপন সত্ত্বার সঙ্গে খান্নাসটি অবস্থান দরুন গুরুর কাছে আত্মসমর্পণ করতে চায় না। ইহাই খান্নাসের কুমন্ত্রণা”
“মানুষ নিজের ভেতর ঘুমিয়ে থাকা সত্যটিকে বুঝতে না পেরে উর্ধ্বে গগণে আল্লাহর অবস্থানটি আছে বলে বিশ্বাস স্থাপন করে আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রার্থণার ভাষাটি বলতে থাকে”
“রুহের পরিপূর্ণ দর্শনটিকে আমরা তথা মুসলমানেরা নূরে মোহাম্মদীর দর্শন বলে থাকি। আবার অন্য যে কোন ধর্মের যে কোন সাধক যদি রুহের পরিপূর্ণ দর্শনটি লাভ করে থাকেন আর যদি সেই ধর্মের প্রবর্তকের নামে নূরটির নামকরণ করে থাকেন তাহলে আমার বলার কিছুই থাকে না। কারণ আল্লাহর এক তাঁর নূরও এক এবং বীজরুপী রুহের অবস্থানটিও এক”
“আসলে উলঙ্গ সত্য কথাটি বলতে গেলে বলতে হয় যে, রুহুল আমিন হলো মহানবীর আপন আধ্যাত্মিক প্রতিচ্ছবি ইহা জগতময় ব্যক্তও হতে পারে আবার যে কোন রুপ মুর্তি ধারণ করতেও পারে। ইহা স্থান-কালের (টাইম এন্ড স্পেস) সব রকম মানুষের আদি এবং আসল রুপ। এই রুপের মাঝে প্রত্যাবর্তন করাই মানব জীবনের পরম এবং চরম স্বার্থকতা। আল্লাহর নিকট মানুষের প্রত্যাবর্তন করা তথা ফিরে আসার অর্থটি ইহাই”
“আল্লাহর প্রত্যেক ওলি. যাদের আমরা মহা মানব বলে থাকি তাঁরা রুহুল্লাহ্ তথা আল্লাহর রুহ”
“র্ধমীয় অনুশাসনে প্রত্যেকটি বিষয়ের দুইটি দিক থাকে, একটি বাহির অপরটি ভিতর”
“বৈষয়িক চিন্তা চেতনার মধ্যে যখন একজন মানুষ প্রচন্ড ভাবে ডুবে থাকে তখন আধ্যাত্মিক জ্ঞান এবং সত্যের পরিচয় জানবার ধ্যান সাধনা তথা মোরাকাবা মোশাহেদাটি করতে পারে না”
“একই তুচ্ছ বিষয়ের বর্ণনায় কেউ হেদায়েত গ্রহন করেন আবার কেউ হেদায়েতের বলয় থেকে ছিটকিয়ে দূরে পড়ে যান”
“ফেরেশতারা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তারা মানুষের চেয়ে জ্ঞানী নয়”
“দুনিয়ার লোভ ও মোহের সুতাগুলো এতই শক্ত যে মুক্তির দর্শনের আহবান কানে ও হৃদয়ে প্রবেশ এবং আঘাত করতে পারে না। ইহা তাদের তকদির কি না জানি না, তবে আল্লাহ্ কতৃক যে সীমিত স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি দেওয়া হয়েছে সেই স্বাধীনতার বলয় হতে স্বেচ্ছায় মুক্তির দর্শনটিকে তারা আলিঙ্গন করতে চায় না”
“আপন নফ্সের সঙ্গে মিশে থাকা খান্নাস হতে মুক্ত নেওয়াই ধর্মের একমাত্র উপদেশ”
“যারা আল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগটি স্থায়ী করার ইচ্ছায় ধ্যান সাধনায় মশগুল থাকেন, তাদেরকে সালাতি তথা (দায়েমি) নামাজি বলা হয়। সালাতি শব্দটির বাংলা অর্থটি হলো যোগী”
“ঘর ছেরে দিলেই সংসার বৈরাগী হয় না, বরং খান্নাসরুপী শয়তানকে নিজের পবিত্র নফ্স থেকে তাড়িয়ে দিতে পারলেই হয় বৈরাগ্য। এই বৈরাগ্য সাধনই ইসলামের মূল মন্ত্র”
“যে কল্যাণের সাহায্যে মানুষ মৃত্যুকে জয় করে নিতে পারে তথা জ্ঞান চক্রের ঘূর্ণায়মান বৃত্ত হতে নিজেকে মুক্ত করতে পারে উহাই আল্লাহর দৃষ্টিতে একমাত্র কল্যাণ তথা একমাত্র রহমত। ইহাই আল্লাহ্কে পাবার পথে ধাবিত করে এবং পরিশেষে যাহা পাওয়া উচিৎ সেই রবরুপী আল্লাহর সঙ্গে মিলনে একাকার হয়ে যায়”
“লোভ, মোহ, ক্রোধ, হিংসা, দ্বেষ ইত্যাদি কুলষিত কালিমার তিনশ ষাটটি (হিজরি সনের মাপকাঠিতে) মুর্তি মানব দেহে বিরাজ করে। এই মুর্তিগুলোকে তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখবার নামই হজ¦। তওয়াফের মাধ্যমে বার বার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দর্শনের দ্বারা পরিশুদ্ধ হতে উপদেশ দেওয়া হয়েছে”
“পিতৃ পুরুষের অনুসরণ এবং অনুকরণ করবার অভ্যাস ধর্মজীবনে সত্য লাভের পথে সত্যিই একাটি শক্তিশালী বাঁধা”
“ছয় রিপুর মাধ্যমে যাহা মনমগজে বাসা বাঁধতে থাকে উহাই একটি একটি করে হিসাব করে বর্জন করে দেবার সাধনাটির নাম সিয়াম”
“লোভ, মোহ, মাৎসর্য্য, কাম, ক্রোধ, অহংকার এগুলো মিলিত ফসলের নামই হলো শয়তানি”
“ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান বলার চেয়ে কি- ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন দর্শন বললে আরও বেশি ভাল মানায় না ?”
“মমিন তিঁনিই, যিনি এই কামনার বন্ধন হতে মুক্ত হতে পেরেছেন। এই কামনাই দুনিয়ার কর্মগুলোকে কুলষিত করে ফেলে”
“মানুষকে জন্মলগ্ন হতে ফেরেশতা এবং জ্বীন উভয়ের স্বভাবের সমন্বয়েই সৃষ্টি করা হয়েছে”
“আল্লাহ্ হতেই আমাদের আগমন আবার আল্লাহর দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন। এই প্রত্যাবর্তনের সময়ে অতিরিক্ত কোন ভেঁজাল নিয়ে যাওয়া যাবে না। শোধন কর্মের মাধ্যমে এই অতিরিক্ত বিষয় সমূহকে পরিত্যাগ করে পূর্বের মত যখন হতে পারবে তখনই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা যায়। সেই অতিরিক্ত বিষয়টির নামই হলো আমিত্ব তথা খান্নাসরুপী শয়তান”
“পৃথিবীর এক মিনিটের মধ্যে যতগুলো ঘটনা ঘটে চলেছে এক একটি বিশেষ রুপ বৈচিত্রে সেই এক মিনিটের অগণিত রুপগুলো আর কোন দিনও দেখানো হয় না এবং হবেও না। এই কারণে মহান আল্লাহ্পাক জিল জালাল এবং কারামতওআলা”
“সাধক যখন ধ্যান সাধনার মাধ্যমে বীজরুপী রুহকে পূর্ণাঙ্গ রুপে প্রকাশ করার সাধনায় মত্ত থাকে এবং আল্লাহ্র বিশেষ রহমত প্রাপ্ত হলে রুহ আলোর মুর্তি ধারণ করে এবং এই আলোকিত নূরটির আত্মপ্রকাশ নিজের ভিতর থেকেই ফুঁটে এবং ইহাকে হুর বলা হয়। হুরের রুপটি মানুষের নিজের নূরানী অতীব সুক্ষ্ম চেহারা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং এটাই হলো আত্ম দর্শনের চরম পর্যায়”
“আল্লাহ্কে আপন নফ্সের উপর পূর্ণরুপে জাগ্রত করে তোলার ধ্যান সাধনার নামটিই সুফিবাদ”
(জীলানী. জান শরীফ বাবা দেলোয়ার হোসেন আল-সুরেশ্বরীর সেত্ত্বা পুস্তক হতে, ৭৫ থেকে ৭৯ নাম্বার পৃষ্ঠা)